প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে এবার অংশীজনদের মতামত নিতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ লক্ষ্যে বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) দাখিল করা তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন নিয়ে আজ (বুধবার) বৈঠকে বসতে যাচ্ছে কমিশন।
জানা গেছে, প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার জন্য সম্ভাব্য তিনটি পদ্ধতি— পোস্টাল ব্যালট, অনলাইন ভোটিং ও প্রক্সি ভোটিং নিয়ে বিশদ পর্যালোচনা করছে ইসি। গত ৮ এপ্রিল কারিগরি বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়ার পর এবার মাঠ পর্যায়ের অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ইসি সূত্রে জানা যায়, চলতি মাসের শেষ দিকে দুই দিনব্যাপী একটি সংলাপের আয়োজন করা হতে পারে। এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সদস্য, গণমাধ্যমকর্মী এবং নির্বাচন সংশ্লিষ্ট প্রায় ৪০০ ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানানোর পরিকল্পনা রয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ, এম, এম, নাসির উদ্দীন নেতৃত্বাধীন পুরো কমিশন এই মতবিনিময় সভায় উপস্থিত থাকবেন।
নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানিয়েছেন, চূড়ান্ত পদ্ধতি নির্ধারণে একটি ‘অ্যাডভাইজরি টিম’ গঠন করা হয়েছে। এই টিম তিনটি পদ্ধতির সুবিধা, অসুবিধা ও দুর্বলতা পর্যালোচনা করে একটি সুপারিশমালা তৈরি করবে। এরপরই অংশীজনদের মতামত নেওয়া হবে।
এদিকে, ভোট পদ্ধতির সম্ভাব্যতা যাচাই, উন্নয়ন এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইসি সচিবালয় এই অ্যাডভাইজরি টিম গঠন করেছে। সচিবালয়ের সচিব আখতার আহমেদ জানান, বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুল ইসলামকে প্রধান করে গঠিত ১২ সদস্যের বিশেষজ্ঞ দলের ২০ এপ্রিলের মধ্যেই তাদের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা ছিল।
প্রতিবেদনে পোস্টাল ব্যালট, অনলাইন ভোটিং ও প্রক্সি ভোটিংয়ের মাধ্যমে প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে কী ধরনের সমস্যা হতে পারে এবং বিদ্যমান সীমাবদ্ধতাগুলো কী, তা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। একাধিক বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, কোনো একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতিকে এখনই উপযুক্ত বলে মতামত দেওয়া হয়নি।বুয়েটের অধ্যাপক ড. মনিরুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। শিগগিরই আরেকটি বিস্তারিত প্রতিবেদন দেওয়া হবে। তিনটি প্রতিষ্ঠান আলাদাভাবে তাদের মতামত দিয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, তাদের প্রতিবেদনে তিনটি পদ্ধতির সুবিধা-অসুবিধা এবং সীমাবদ্ধতাগুলো স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ সোমবার জানান, এমআইএসটিসহ তিনটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন হাতে পেয়েছে কমিশন। এসব প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।ইসির এনআইডি উইংয়ের পরিচালক (নিবন্ধন ও প্রবাসী শাখা) মো. আব্দুল মমিন সরকার জানিয়েছেন, বুধবারের কমিশন সভায় প্রতিবেদনগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হতে পারে। এরপরই অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময়সূচি চূড়ান্ত করা হবে। ধারণা করা হচ্ছে, ২৮ ও ২৯ এপ্রিল এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হতে পারে।
তিনি আরও জানান, মঙ্গলবারের কমিশন বৈঠকে অনুমোদন পেলে দ্রুতই সংশ্লিষ্টদের আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হবে। আমন্ত্রিতদের মধ্যে নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত প্রায় অর্ধশত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, নির্বাচন ব্যবস্থা ও স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান, গণমাধ্যম প্রতিনিধি, পররাষ্ট্র ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা থাকবেন।